বিশ্বাস নিউজের তদন্তে এই দাবি ভুল বলে প্ৰমাণিত হয়েছে। আসলে ভারতীয় সংবিধানে এমন কোনো অনুচ্ছেদ নেই। ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকারের বৰ্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেখানে অনুচ্ছেদ 25-এর থেকে 28 অব্দি ধাৰ্মিক স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়ে বলা হয়েছে, সেখানে আবার অনুচ্ছেদ 29-এর থেকে 31-অব্দি সংস্কৃতি এবং শিক্ষা সম্পর্কিত অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ 30-এ স্পষ্টভাবে সংখ্যালঘুদের ধৰ্ম এবং ভাষার ভিত্তিতে নিজের পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান স্থাপন এবং পরিচালনা করার অধিকার প্ৰদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন দিল্লি (বিশ্বাস নিউজ) লোকসভা নিৰ্বাচন 24-র সময়ে সংবিধান একটা মুখ্য বিষয় ছিল এবং নিৰ্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পরেও সামাজিক মাধ্যমে এই সম্পর্কে দাবি শেয়ার করা হচ্ছে। এই ধরনের একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, কেন্দ্রে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন হওয়ার পর সংবিধানের অনুচ্ছেদ 30 এ বিলুপ্ত হতে পারে, যার মতে, হিন্দু সম্প্ৰদায়কে বিদ্যালয়ে হিন্দুদের ধাৰ্মিক গ্ৰন্থগুলো পড়ানোর অনুমতি দেওয়া হবে না, তবে মুসলমান সম্প্ৰদায়ের মাদ্ৰাসাতে তাদের ধাৰ্মিক গ্ৰন্থ পড়ানোর অধিকার থাকবে।
বিশ্বাস নিউজের তদন্তে এই দাবি ভুল বলে প্ৰমাণিত হয়েছে। আসলে ভারতীয় সংবিধানে এমন কোনো অনুচ্ছেদ নেই। ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকারের বৰ্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেখানে অনুচ্ছেদ 25-এর থেকে 28 অব্দি ধাৰ্মিক স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়ে বলা হয়েছে, সেখানে আবার অনুচ্ছেদ 29-এর থেকে 31-অব্দি সংস্কৃতি এবং শিক্ষা সম্পর্কিত অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ 30-এ স্পষ্টভাবে সংখ্যালঘুদের ধৰ্ম এবং ভাষার ভিত্তিতে নিজের পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান স্থাপন এবং পরিচালনা করার অধিকার প্ৰদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী ‘Neelu Jain’ ভাইরাল পোস্ট (আৰ্কাইভ লিঙ্ক) শেয়ার করে লিখেছেন যে “*মোদীর দ্বিতিয় ধাক্কা আসছে।*
*ধারা 30 এ বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।*
*মোদী মহাশয় হিন্দুদেরকে করা প্ৰতারণাগুলো সংশোধন করার জন্য পূৰ্ণরূপে তৈরি হয়েছেন **আপনি “আইন 30” এবং আইন “30-এ” বিষয়ে শুনেছেন কি?* আপনি কি জানেন *”30A”* -এর হিন্দি অৰ্থ কী? আরও জানার জন্য দেরি করবেন না।
*30-A* সংবিধানে অন্তৰ্ভুক্ত একটি আইন। যখন নেহরু এই আইনটি সংবিধানে অন্তৰ্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এর তীব্ৰ বিরোধিতা করেছিলেন। সর্দার প্যাটেল বলেছিলেন যে, *”এই আইনটি হিন্দুদের সঙ্গে করা প্ৰতারণা মাত্র, *তাই যদি এই আইনটি সংবিধানে আনা হয় তবে আমি ক্যাবিনেট এবং কংগ্ৰেস দলের থেকে পদত্যাগ করব। শেষে এর বিরুদ্ধে সর্দার প্যাটেলের ইচ্ছার সামনে নেহরু নত হতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু কোনো একটি অজানা দুৰ্ভাগ্যবশত এই ঘটনার কয়েক মাস পর সর্দার বল্লবভাই প্যাটেলের আকস্মিক মৃত্যু হয়..?* সর্দার প্যাটেলের মৃত্যুর পর, নেহরু এই আইনটিকে তৎক্ষণাৎ সংবিধানে অন্তৰ্ভুক্ত করেন। *
*30-A আসলে কি, আমি আপনাদের এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো বলব!…এই আইন মতে, হিন্দুদের নিজের “হিন্দু ধৰ্ম” -এর বিষয়ে শেখানো/পড়ানোর অনুমতি নেই।
*”ধারা 30-A”* সেসব অনুমতি বা অধিকার দেয় না… .সেই জন্য হিন্দুদের নিজের কলেজগুলোতে হিন্দু ধর্ম পড়ানোর প্রয়োজন নেই।
হিন্দু ধৰ্ম শেখানো/পড়ানোর জন্য কলেজ স্থাপন হওয়ার প্রয়োজন নেই। হিন্দু বিদ্যালয়গুলোতে হিন্দু ধৰ্ম পড়ানো আরম্ভ করার প্রয়োজন নেই। ধারা 30-A মতে বিদ্যালয় বা কলেজগুলোতে কাউকে প্রকাশ্যে হিন্দু ধৰ্ম, সংস্কৃতি পড়ানোর অনুমতি দেওয়া হবেনা। আশ্চর্য হতে হয়, ( 30-A) নেহরু তাঁর সংবিধানে আরও একটি আইন বানিয়েছিলেন *”আইন 30″*। এই “আইন 30”-এর মতে, মুসলমান, শিখ এবং খ্ৰিস্টান ধর্মাবলম্বীরা নিজের ধাৰ্মিক শিক্ষার জন্য ইসলামি, শিখ, খ্ৰিস্টান স্কুল স্থাপন করতে পারবেন।
মুসলমান, শিখ এবং খ্ৰিস্টানরা নিজের ধর্মের বিষয়ে শেখাতে পারবেন। আইন 30 মুসলমান সম্প্ৰদায়ের মানুষকে নিজের মাদ্ৰাসা স্থাপন করার সম্পূৰ্ণ অধিকার এবং অনুমতি প্রদান করে এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ 30-এ খ্ৰিস্টান সম্প্ৰদায়ের মানুষকে নিজের ধাৰ্মিক বিদ্যালয় এবং কলেজ স্থাপন করার এবং শিক্ষা দান করার সম্পূৰ্ণ অধিকার এবং অনুমতি প্রদান করে। বিনামূল্যে নিজের ধর্মের প্ৰচার করুন… এর অন্য একটি আইনি রূপ হল হিন্দু মন্দিরের সমস্ত টাকা পয়সা সরকারের বিবেকের ওপরে ছেড়ে দেওয়া হবে, হিন্দু মন্দিরগুলোতে ভক্তদের দ্বারা দান করা ধন এবং অন্যান্য সামগ্ৰী রাজ্যের কোষাগারে আনা যাবে। কিন্তু মুসলমান এবং খ্ৰিস্টান মসজিদ ও গিৰ্জাগুলোতে প্ৰদান করা দান এবং ভিক্ষা শুধুমাত্র মুসলমান এবং খ্ৰিস্টান সম্প্ৰদায়ের জন্য দেওয়া হয়। *”আইন 30″* -এর বৈশিষ্ট্যগুলো এরকম।
এই জন্য, *ধারা 30-এ” এবং *ধারা 30″* হিন্দুদের সঙ্গে ইচ্ছাকৃত ভেদাভেদ এবং পরিকল্পিতভাবে করা বড় একটি প্ৰতারণা।
এই কথাটি সবাই বুঝে নেওয়া জরুরি যে, আজ হিন্দু শুধুমাত্র লোককথায় সীমিত হয়ে রয়েছে। হিন্দুদের নিজের শাস্ত্রের জ্ঞান নেই।
*জেনে নিন* অন্যদের জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করুন, আসুন আমরা সবাই সনাতন ধর্মকে রক্ষা করি। পড়ুন, শিখুন এবং এগিয়ে দিন..
এই *অনুচ্ছেদ 30-এ*-এর কারণ হল….যে আমরা আমাদের দেশে কখনও ভগবত গীতা পড়াতে পারব না। পড়র পর ঠিক মনে হলে এটি অবশ্যই ফরওয়ার্ড করবেন। যাতে সবাই জানতে পারে যে নেহেরু এটা কি কারণে এবং কেন করেছিলেন? *যদি আপনি হিন্দু তবে এটি অবশ্যই 5 জনকে ফরওয়ার্ড করবেন।* *ধন্যবাদ **আমি হিন্দু সেইজন্য পাঁঠালাম!!* জয় শ্ৰী রাম।”
সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কিছু অন্যান্য ব্যবহারকারী এই পোস্টকে একই ধরনের এবং মিল থাকা দাবির সহ শেয়ার করেছেন।
যেহেতু ভাইরাল পোস্টে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ’30 এ-কে সমাপ্ত করে দেওয়ার কথা দাবি করা হয়েছে, তাই আমরা ভারতীয় সংবিধান পরীক্ষা করলাম, যেটি কেন্দ্ৰীয় সরকারের ওয়েবসাইট legislative.gov.in/constitution-of-india-এ হিন্দি, ইংরেজি সহ অন্য ভারতীয় ভাষায় উপলব্ধ রয়েছে।
ভারতের সংবিধানের ভাগ 3 যেখানে মৌলিক অধিকারের বৰ্ণনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে ভাগ 4-এ নীতি নিৰ্দেশক তথ্য সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে। ভাইরাল পোস্টে ধাৰ্মিক অধিকারের বিষয়ে দাবি করা হয়েছে, যা খণ্ড 3-র অংশ।
ভারতীয় সংবিধানের খণ্ড 3-এ অনুচ্ছেদ 25 এর থেকে 28 -র মধ্যে ধাৰ্মিক স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়ে বৰ্ণনা করা হয়েছে।
সেখানে আবার অনুচ্ছেদ 29-31 -এ সংস্কৃতি এবং শিক্ষা সম্পর্কে অধিকারের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ 30-এ ধৰ্ম বা ভাষার ভিত্তিতে সমস্ত সংখ্যালঘু বর্গের মানুষকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান স্থাপন এবং সেটিকে পরিচালনা করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। অনুচ্ছেদ 30 (1) এবং 30 (1) (এ) এবং অনুচ্ছেদ 30 (2) এই অধিকারগুলোর বিষয়েই বলে। অনুচ্ছেদ 30 (2) এটি নিশ্চিত করে যে, (এই ধরনের) শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করার জন্য রাজ্য ধৰ্ম বা ভাষার ভিত্তিতে কারো সঙ্গে কোনো ধরনের ভেদাভেদ করতে পারবে না।
আমাদের তদন্তে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, ভারতীয় সংবিধানে অনুচ্ছেদ 30 (এ) -এর মতো কোনো ব্যবস্থা নেই, যার উল্লেখ ভাইরাল পোস্টে করা হয়েছে।
যেহেতু, ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ 30 (1) ধৰ্ম বা ভাষা ভিত্তিক সব সংখ্যালঘু বর্গের মানুষকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান স্থাপন এবং সেটিকে পরিচালনা করার অধিকার প্রদান করে, সেইজন্য ভারতীয় সংসদের পক্ষ থেকে এই অধিকারগুলো রক্ষা করার জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান আয়োগ(এনসিএমইআই) স্থাপন করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ভারতীয় সংবিধানে “সংখ্যালঘু” শব্দটির কোনো ব্যাখ্যা প্ৰদান করা হয়নি, কিন্তু সংবিধান ধৰ্ম বা ভাষা ভিত্তিক সব সংখ্যালঘু বর্গের মানুষকে মান্যতা প্ৰদান করে, সেইজন্য কেন্দ্ৰীয় সরকার এই শ্ৰেণিতে ছয়টি ধাৰ্মিক সংখ্যালঘু জাতিকে তালিকাভুক্ত করেছে, এখানে মুসলমান, খ্ৰিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, এবং জৈন ধৰ্ম অন্তৰ্ভুক্ত রয়েছে।
স্পষ্টভাবে বুঝতে হলে বলতে হয় যে, অনুচ্ছেদ 30 সংখ্যালঘুদের এই অধিকার প্ৰদান করে যে, তাঁরা নিজের সন্তানকে নিজের ভাষায় শিক্ষা প্ৰদান করতে পারবেন।
ভাইরাল পোস্টে করা দাবি নিয়ে আমরা উচ্চতম ন্যায়ালয়ের আইনজীবী রুদ্ৰ বিক্ৰম সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তিনি আমাদের স্পষ্টভাবে জানালেন যে, “ভারতীয় সংবিধানে ধাৰ্মিক স্বাধীনতা এবং সংস্কৃতি তথা শিক্ষা সম্পৰ্কিত অধিকারগুলোর বৰ্ণনা অনুচ্ছেদ 25 এর থেকে 30-এর মধ্যে রয়েছে এবং অনুচ্ছেদ 30-এর দুটো ধারা আছে যদিও সংবিধানে অনুচ্ছেদ 30এ-এর মত কোনো অনুচ্ছেদ নেই।”
ভাইরাল পোস্ট শেয়ার করা ব্যবহারকারী, সম্পৰ্কিত পোস্টটি পুৰ্ণেন্দ্ৰ কুলশ্ৰেষ্ঠ গ্ৰুপে শেয়ার করেছেন, যার প্ৰায় এক লাখের চেয়েও বেশি সদস্য আছে।
নিৰ্বাচন সম্পর্কে অন্যান্য বিভ্ৰান্তিকর তথা ভুয়ো দাবির তদন্ত করা ফ্যাক্ট চেক রিপোৰ্টগুলো বিশ্বাস নিউজের নিৰ্বাচনী বিভাগে পড়তে পারবেন।
উপসংহার: আসলে ভারতীয় সংবিধানে এমন কোনো অনুচ্ছেদ নেই। ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকারের বৰ্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেখানে অনুচ্ছেদ 25 -এর থেকে 28 অব্দি ধাৰ্মিক স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়ে বলা হয়েছে, সেখানে আবার অনুচ্ছেদ 29 -এর থেকে 31-অব্দি সংস্কৃতি এবং শিক্ষা সম্পর্কিয় অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ 30 -এ স্পষ্টভাবে সংখ্যালঘুদের ধৰ্ম এবং ভাষার ভিত্তিতে নিজের পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান স্থাপন এবং পরিচালনা করার অধিকার প্ৰদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ 30-এর দুটো ধারা আছে যদিও সংবিধানে অনুচ্ছেদ 30এ-এর মত কোনো অনুচ্ছেদ নেই।
Knowing the truth is your right. If you have a doubt on any news that could impact you, society or the nation, let us know. You can share your doubts and send you news for fact verification on our mail ID contact@vishvasnews.com or whatsapp us on 9205270923