Fact Check: বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা সভায় ভারতীয় হাইকমিশনারের উপস্থিতির দাবি ভুয়া
বিশ্বাস নিউজ তাদের তদন্তে এই দাবিটি ভুল বলে জানতে পেরেছে। ভাইরাল ছবিটিতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল(অবসরপ্রাপ্ত) তারিক আহমেদ সিদ্দকী। আবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারের নাম প্রনয় বর্মা।
- By: Rajesh Upadhyay
- Published: আগস্ট 6, 2024 at 05:59 অপরাহ্ন
নতুন দিল্লী (বিশ্বাস নিউজ)। বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে হওয়া হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর সামাজিক মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ-এর একটি ছবি ভাইরাল হচ্ছে, যেটাতে তাকে সামরিক কর্মকর্তা সহ অন্যান্যদের সঙ্গে বৈঠকে করতে দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া হিংসাত্মক বিক্ষোভ প্রদর্শনের বিষয়ে ভাইরাল করা এই ছবি নিয়ে দাবি করা হচ্ছে যে, এটিতে উপস্থিত একজন ব্যক্তি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার। ভাইরাল পোষ্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিশ্বাস নিউজ তাদের তদন্তে এই দাবিটি ভুল বলে জানতে পেরেছে। ভাইরাল ছবিটিতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল(অবসরপ্রাপ্ত) তারিক আহমেদ সিদ্দকী। আবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারের নাম প্রনয় বর্মা।
কি হচ্ছে ভাইরাল
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী ‘Shoaib Bin Ahmed Sohel’ ভাইরাল পোষ্টটি (আর্কাইভ লিঙ্ক) শেয়ার করে লিখেছেন যে, “তিন বাহিনীর প্রধান সহ এত গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনার কেন?”
তদন্ত
ভাইরাল ছবিটিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে বৈঠক করা অবস্থায় দেখা যায়, যেটা নিয়ে দাবি করা হচ্ছে যে, তার সঙ্গে এই বৈঠকে ভারতের হাইকমিশনারও উপস্থিত রয়েছেন। ভাইরাল দাবিটির অনুসন্ধান করার জন্য আমরা ছবিটির প্রকৃত উৎসটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খুঁজলাম। অনুসন্ধানে এই ছবিটি একটি পাকিস্তানের হেন্ডেলে যুক্ত দেখা যায়, যা ভারতে নিষিদ্ধ। বিপিএন-এর সাহায্যে আমরা এই পোষ্টটি অ্যাক্সেস করেছি এবং জানতে পারলাম যে এই ছবিটিতে উপস্থিত ব্যক্তিকে ভারতীয় গুপ্ত সংস্থার (র) এজেন্ট বলা হয়েছে।
এই অনুসন্ধানে আমরা এই ছবিটি ‘বাংলাদেশ আওয়ামি লিগ’-এর কর্তৃত্বাধীন ফেসবুক পেজ-এ যুক্ত অবস্থায় পেলাম, যেটিকে 2024 সালের 21 জুলাই শেয়ার করা হয়েছে।
এই পোষ্টটিতে তিনটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে এবং প্রতিটি ছবিতে উল্লেখিত ব্যক্তিকে দেখা যাাচ্ছে, যাকে ভাইরাল ছবিটিতেও দেখা গেছে। পোষ্টের সঙ্গে থাকা ক্যাপশনটি বাংলা ভাষায় লেখা হয়েছে,
“বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (২১ জুলাই ২০২৪) প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের সঙ্গে বৈঠক করে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেন।”
প্রাপ্ত তথ্য মতে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, দেশের সুরক্ষা পরিস্থিতি যাচাই করতে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, তিনজন সামরিক বাহিনীর প্রধান, ক্যাবিনেট সচিব, সশস্ত্রবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার সহ অন্যান্যদের সঙ্গে বৈঠক করলেন।
একই ছবি আমরা ভারতীয় সাংবাদিক সিদ্ধান্ত সিব্বালের নিজস্ব এক্স প্রোফাইলেও যুক্ত দেখতে পেলাম, যেটাকে 2024 সালের 21 জুলাই শেয়ার করা হয়েছে।
যদিও এই ছবিগুলো থেকে এটা জানতে পারা যায়নি যে, ভাইরাল ছবিতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি আসলে কে। তার জন্য আমরা আরও একবার রিভার্স ইমেজ সার্চের সাহায্য নিলাম এবং এই অনুসন্ধানে একই ব্যক্তি অন্য ছবি ফ্লিকার.কম নামের ওয়েবসাইটে পাওয়া গেল। তথ্য মতে, ওনার নাম তারিক আহমেদ সিদ্দকী, যিনি বাংলাদেশের নিরপত্তা উপদেষ্টা।
pmindia.gov.in -এর ওয়েবসাইটে 2022 সালের সাত মার্চের একটি বিজ্ঞপ্তি পাওয়া গেল, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল(অবসরপ্রাপ্ত)তারিক আহমেদ সিদ্দকী-র সঙ্গে সাক্ষাতের উল্লেখ রয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিঙের নিজস্ব এক্স প্রোফাইলে তার ছবি পাওয়া যায়, যা 2022 সালের সাক্ষাৎকারের ছবি।
আমাদের তদন্তে এই কথাটি স্পষ্ট যে, ভাইরাল ছবিটিতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দকী, ভারতীয় হাইকমিশনার নন, যা এই পোষ্টে দাবি করা হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনারের নিজস্ব ওয়েবসাইট আমরা নিযুক্ত হাইকমিশনারের ছবি পেয়েছি যার নাম প্রনয় বর্মা।
‘ইন্ডিয়া ইন বাংলাদেশ’ -এর কর্তৃত্বাধীন এক্স হেন্ডেলে বহু টুইট পাওয়া গেছে, যেখানে প্রনয় বর্মার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সাক্ষাৎকারের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে হিংসাত্মক বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছিল, যার ফলে 100-রও অধিক লোকের মৃত্যু হয়েছিল।
ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা 1972 সালে আরম্ভ হয়েছিল, যার অধীনে সরকারি খাতের চাকরি ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে 30 শতাংশ আসন মুক্তিযোদ্ধা এবং পরে তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। পরবর্তীকালে মহিলাদের জন্য 10 শতাংশ আসন সংরক্ষিত হয়েছিল এবং অনগ্রসর জেলা থেকে আগত প্রার্থীদের জন্য অতিরিক্ত 10 শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এছাড়াও উপজাতীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য 5 শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য 1 শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এইভাবে দেশে সামগ্রিকভাবে 56 শতাংশ সংরক্ষণ রয়েছে।অনেকে মনে করেন যে, সংরক্ষিত আসনের এত বড় অংশ মেধাকে উপেক্ষা করে, তাই শিক্ষার্থীরা এই ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করছে
ভাইরাল ছবিটির বিষয়ে আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং তারা সবাই আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, ছবিতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে তিনি সেখানকার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দকী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই বাংলাদেশী সাংবাদিক বলেন যে, “এতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে তিনি বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দকী”
তিনি বাংলাদেশী নিউজ পোর্টাল prothomalo.com -এর একটি প্রতিবেদন শেয়ার করেছেন যেখানে একই রেফারেন্স সহ তারিক আহমেদ সিদ্দকীর একটি ছবি রয়েছে। প্রতিবেদনে ছবির কৃতিত্ব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে দেওয়া হয়েছে। আরেক বাংলাদেশী ফ্যাক্ট চেকার এবং হিউমার স্ক্যানারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোহম্মদ মাসিউজ্জামান নিশ্চিত করেছেন, “যে ব্যক্তিকে দেখা গেছে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দকী”
ভাইরাল ছবিটিকে ভুয়া দাবির সঙ্গে শেয়ার করা ভ্যবহারকারীকে ফেসবুকে প্রায় ছয় হাজার মানুষ অনুসরণ করে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বিক্ষেভের সঙ্গে সম্পর্কিত ভাইরাল দাবির ফ্যাক্ট রিপোর্ট এখানে, এখানে এবং এখানে পড়া যাবে।
উপসংহার: বাংলাদেশে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের নিরাপত্তা বৈঠকে ভারতের হস্তক্ষেপের দাবি করা ভাইরাল ছবিতে দেখা ব্যক্তিটি বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দকী, ভারতের হাইকমিশনার প্রনয় বর্মা নয়, যা ভাইরাল পোষ্টে দাবি করা হয়েছে।
- Claim Review : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বৈঠকে ভারতীয় হাইকমিশনারের উপস্থিতি।
- Claimed By : FB User-Shoaib Bin Ahmed Sohel
- Fact Check : False
Know the truth! If you have any doubts about any information or a rumor, do let us know!
Knowing the truth is your right. If you feel any information is doubtful and it can impact the society or nation, send it to us by any of the sources mentioned below.